27.1 C
Kolkata
Friday, October 10, 2025
spot_img

শিশুর ইন্টারনেটে আসক্তি কাটানোর ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি

ইন্টারনেট দৈনন্দিন জীবনটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। দুনিয়া প্রকৃত অর্থেই এখন হাতের মুঠোয়। যে কোনও প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে, অবসর কাটাতে, প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডায় কিংবা ভার্চুয়াল জগতের খোঁজ নিতে ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন আমরা প্রায় প্রত্যেকেই অবসর যাপনের অনেকটা সময়ই ব্যয় করি ইন্টারনেটে বুঁদ থেকে। তা সে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্ট ফোন যাই হোক না কেন। বিশেষ করে বাইরে বেরনো কমে যাওয়ার পর থেকে তো এই প্রবণতা মারাত্মক রকমের বেড়ে গিয়েছে। এরই একটা মারাত্মক কুফল হিসেবে দেখা দিয়েছে শিশুদের ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি। এটা ঠিকই, যে বাচ্চাদের নিয়মিত বাইরে খেলাধুলো করতে পাঠাতে দ্বিধায় ভুগছেন অনেক মা-বাবাই। যথেষ্ট কারণও রয়েছে তার। কিন্তু শিশুর অবসর যাপন কিংবা খেলাধুলার একমাত্র সঙ্গী হয়ে ওঠে ইন্টারনেট তাহলে চিন্তার বিষয় বই কী। তাই সঠিক সময়ে রাশ টানা প্রয়োজন।

শিশুর ইন্টারনেটে আসক্তি কাটানোর ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আমরা বড়রাই যদি সারাক্ষণ মোবাইলে চ্যাট করতে কিংবা সোশাল সাইটে ব্যস্ত থাকি তাহলে সন্তানেরও মনে হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই সন্তানের নেশা কাটানোর জন্য নিজেও যতটা সম্ভব মোবাইলের ব্যবহার কমান। অফিসের পরে সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান। আপনি যদি বাচ্চাকে পড়তে দিয়ে নিজে মোবাইলে গেম খেলেন কিংবা সোশাল সাইটের জোকস পড়ে হাসেন আর আশা করেন সন্তান মন দিয়ে পড়বে, সেটা সম্ভব নয়। এতে বাচ্চা যদি পড়া ছেড়ে উঠে যায় কিংবা মোবাইলে গেম খেলতে বায়না করে তাহলে ওকে খুব একটা দোষ দেওয়া যায় না। সন্তান যখন পড়ছে তখন আপনি মোবাইলে ব্যস্ত না থেকে বই বা ম্যাগাজ়িন পড়ুন বা অন্য কোনও কাজ করুন। আপনাকে দেখেই সন্তান শিখবে। তাই ওর রোল মডেল হয়ে ওঠা জরুরি।

অনেক বাড়িতেই ছোট বাচ্চাকে ভোলাতে, কান্না থামাতে কিংবা খাওয়নোর সময়ে বাবা মায়েরাই শিশুর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন। বাচ্চাও তৎক্ষণাৎ সব ভুলে যায়। পন্থাটা সহজ ঠিকই কিন্তু সমস্যার বীজ রোপণ হয় এখান থেকেই। এরপর বাচ্চা যতই বড় হয় ওর জেদও বাড়তে থাকে সমানতালে। সত্যি কথা বলতে বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে এর সমাধান বের করা বেশ কষ্টকর। তবুও বলব চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব শিশুকে মোবাইলের সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে। বাচ্চাকে ভোলানোর জন্য কোলে নিয়ে একটু ঘুরে আসুন, ক্যারিকেচার করে ওকে ভোলানোর চেষ্টা করুন কিংবা কোনও খেলনা দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করুন। সন্তান একটু বড় হওয়ার পর ওকে বোঝান মোবাইল কাজের জিনিস, খেলার বস্তু নয়।

সন্তান কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করবে কিংবা মোবাইলে গেম খেলবে তার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিন। ওর সঙ্গে চুক্তি করুন দিনে আধঘণ্টা ও গেম খেলতে পারে কিংবা পড়াশোনার পর কিছুক্ষণ ইন্টারনেট সার্ফ করতে পারে। বর্তমান যুগের পরিস্থিতিতে যেখানে বড়দের সকলের হাতে স্মার্ট ফোন এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য সেখানে সন্তানকে গ্যাজেট থেকে পুরোপুরি দূরে রাখা সম্ভব নয়। তাছাড়া তা উচিতও নয়। তবে সন্তান মোবাইলে কী ধরনের গেম খেলছে, ইন্টারনেটে কী সার্চ করছে বা কী ধরনের ভিডিও দেখছে তা খেয়াল রাখুন। সন্তান একটু বড় হলে ইন্টারনেটের খারাপ দিকগুলি সম্পর্কে ওকে সতর্ক করে দিন। নিজের ফোন সবসময় পাসওয়র্ড দিয়ে রাখুন যাতে সন্তান যখন তখন মোবাইল খুলে ফেলতে না পারে।

ইন্টারনেটের সবটাই কিন্তু খারাপ নয়। বরং ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে এটাই ছোটদের শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা বিরাট মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। ফোনে বিভিন্ন শিক্ষামূলক অ্যাপ ডাউনলোড করুন। ল্যাপটপে মাইক্রোসফট অফিসের ছোটখাটো কাজ শেখান। এছাড়া ভিডিও শেয়ারিং সাইটে নানা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখাতে পারেন। ইতিহাস বা ভূগোল পড়ার সময় ল্যাপটপে ম্যাপ এবং উপযোগী ছবি দেখান। যেমন এভারেস্ট নিয়ে পড়ার সময় বাচ্চাকে এভারেস্টের ছবি দেখাতে পারেন। কিংবা এভারেস্টে অভিযাত্রীরা কীভাবে অভিযান করেন তার ভিডিও দেখাতে পারেন। এতে পড়াশোনা ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠবে এবং বাচ্চারও ভাল লাগবে।

দিনের কোনও একটা সময় বাচ্চার সঙ্গে সুন্দর সময় কাটান। সন্তানকে কাছে টেনে নিয়ে একসঙ্গে সারাদিনের গল্প করুন। এই স্পর্শ, আদরগুলো খুব জরুরি। রাতে ঘুমনোর আগে একটু মজা করার জন্য পিলো ফাইট করতে পারেন কিংবা গল্পের বই পড়ে শোনাতে পারেন। এই সময়টুকু আপনারাও মোবাইল থেকে দূরে থাকুন। এতে বাবা মায়ের সঙ্গে সন্তানের সুন্দর বন্ডিং গড়ে উঠবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles