26.1 C
Kolkata
Friday, October 10, 2025
spot_img

ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বা হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়ার কারণ ও চিকিৎসা

হঠাৎ করে কোনো এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন আপনার মুখ একদিকে বেঁকে গেছে! কুলি করতে গেলে জল ঠোঁট বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে, চোখ বন্ধ করতে পারছেন না! কী ভয়ংকর অনুভূতি হবে তখন, তাই না? ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বা হঠাৎ মুখ বেঁকে যাওয়ার কারণ কী, এই সম্পর্কে অনেকেই জানেন না! চলুন আজ এই রোগ সম্পর্কিত কিছু তথ্য জেনে নেই ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট এন্ড জেরোন্টলজিস্ট এর কাছ থেকে।

ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস

এটা এক ধরনের প্যারালাইসিস। আমাদের সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভটিকে ফেসিয়াল নার্ভ বলে। যখন এটি আংশিক বা সম্পূর্ণ প্যারালাইজড হয়ে যায়, তখন তাকে ফেসিয়াল পলসি বা ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস বলে। জন বেল নামের এক ভদ্রলোক এই রোগটি প্রথম আবিষ্কার করেন, সেজন্য একে বেলস পলসিও বলা হয়।

এটা কি পুরোপুরি ভালো হয়?

এই ক্ষেত্রে মুখের পেশীগুলো দুর্বল হয়ে যায় বা একপাশে প্যারালাইজড হয়ে যায়। এটি মুখের মাংসপেশীর সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে হয়। তবে এই পেশীগুলো কিন্তু সাময়িকভাবে আক্রান্ত হয় এবং নিয়মিত চিকিৎসার ফলে এই রোগ সাধারণত পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। ফেসিয়াল পলসি সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ভালো হতে শুরু করে। নার্ভ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে।

কাদের বেশি হয়?

এটি যেকোনো বয়সের মহিলা ও পুরুষের হতে পারে, তবে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এই রোগটি বেশি দেখা যায়। এছাড়াও প্রেগনেন্সির সময়, ফুসফুসের ইনফেকশন, ডায়াবেটিস এবং পরিবারের কেউ এই রোগে আক্রান্ত হবার ইতিহাস থাকলে ফেসিয়াল পলসি হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস এর কারণ

  • ভাইরাল ইনফেকশন
  • মধ্য কর্ণে ইনফেকশন
  • ঠান্ডাজনিত কারণ
  • আঘাতজনিত ও মস্তিষ্কের স্ট্রোকজনিত কারণ
  • ফেসিয়াল টিউমার
  • কানের অপারেশন পরবর্তী ফেসিয়াল নার্ভ ইনজুরি ইত্যাদি

লক্ষণগুলো কী কী?

এই রোগে আক্রান্ত রোগীর মুখ সাধারণত একদিকে বাঁকা হয়ে যায়। তবে শতকরা এক ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে মুখের দুই পাশ আক্রান্ত হয়ে থাকে। রোগীর মুখের যে পাশ আক্রান্ত হয়েছে, সে পাশের চোখ বন্ধ হয় না এবং চোখ দিয়ে জল পড়ে। অনেক সময় চোখ পুরোপুরি খুলতেও কষ্ট হয়ে থাকে। রোগী কপাল ভাঁজ করতে পারে না। এছাড়াও কিছু লক্ষণ থাকে, জেনে নিন সেগুলো সম্পর্কে।

  • চোখে জ্বালা-পোড়া করতে পারে
  • অনেক সময় ‘ড্রাই আই’ সমস্যা দেখা দেয়
  • কুলি করতে গেলে জল গড়িয়ে পড়ে যায়
  • গালের মাংসপেশি ঝুলে যেতে পারে
  • খাবার চিবাতে ও গিলতে কষ্ট হয়
  • মুখের হাসি বেঁকে যায়
  • লালা ঝরতে থাকে
  • জিভ শুকিয়ে যায়
  • এছাড়াও জিভের সামনের অংশের স্বাদের অনুভূতি কমে যেতে পারে
  • মুখের আক্রান্ত পাশে ব্যথা হয়
  • বিশেষ করে চোয়াল এবং মাথায় ব্যথা হয়ে থাকে
  • অনেক সময় কথা বলতে কষ্ট হয়

রোগ নির্ণয়

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ও রোগীর ইতিহাস জেনে রোগ নির্ণয় করতে পারেন, তবে অনেক সময় কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে।

চিকিৎসা

এর চিকিৎসা রোগের কারণের উপর নির্ভর করে। কী কারণে ফেসিয়াল প্যারালাইসিস হয়েছে, তার উপর নির্ভর করে মেডিসিন দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সব ক্ষেত্রেই মেডিসিনেরর পাশাপাশি মূল চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। ফেসিয়াল পলসিতে আক্রান্ত হবার ৭২ ঘন্টার মধ্যে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু হলে রোগীর দ্রুত ভালো হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। সাধারণত এই রোগের জন্য স্টেরয়েড মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। ‘ড্রাই আই’ প্রতিরোধ করার জন্য আই ড্রপ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া চোখ একেবারে বন্ধ না হলে ঘুমানোর সময় সার্জিক্যাল টেপ দিয়ে চোখ বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ফিজিওথেরাপি

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর অবস্থা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান করে থাকেন। তার মধ্যে ফেসিয়াল মাসল এক্সারসাইজ, স্পিচ রি-এডুকেশন, বেলুনিং এক্সারসাইজ, ইলেক্ট্রো থেরাপি রয়েছে। অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তি থেকে দিনে ২-৩ বার ফিজিওথেরাপি নিলে দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। যদি নার্ভ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে, তাহলে রোগী সুস্থ হতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লেগে যায়।

ঘরোয়া চিকিৎসা

১। ফেসিয়াল ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।

২। চোখের জ্বালা-পোড়া এবং ব্যথা কমাতে নরম টাওয়াল উষ্ণ জলেতে ভিজিয়ে চোখে সেঁক দেওয়া যায়।

৩। একটা গ্লাসে অল্প জল নিয়ে তার ভেতর স্ট্র দিয়ে বুদবুদ তুলবেন। এতে ঠোঁটের চারপাশের মাংসপেশী শক্তিশালী হবে, জল পান করার সময় আর গাল বেয়ে পড়ে যাবে না।

৪। কথা বলুন, এতে করে কথা বলার জড়তা কমে আসবে। কোনো শব্দ উচ্চারণে সমস্যা হলে প্রথমে স্বরবর্ণগুলো জোরে জোরে উচ্চারণ করুন। তারপর ব্যঞ্জনবর্ণ অনুশীলন করবেন।

৫। রিল্যাক্স থাকার চেষ্টা করবেন। ব্রেথিং এক্সারসাইজ, ইয়োগা এগুলো আপনাকে রিল্যাক্স থাকতে সাহায্য করবে।

৬। নিয়মিত ফিজিওথেরাপিস্টের শেখানো এক্সারসাইজ করবেন।

৭। নিয়মিত ৮ ঘন্টার ঘুম, হেলদি ডায়েট এবং প্রচুর জল পান করবেন। এসব ক্ষেত্রে হেলদি লাইফস্টাইল আরোগ্য লাভে সহায়তা করে।

সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles