শক্তিরূপে নারী

মাতৃরূপে শক্তির আরাধনা একমাত্র ভারতবর্ষে পরিলক্ষিত হয়। গুপ্ত থেকে ব্যক্ত আর ব্যক্ত থেকে গুপ্ত- শক্তির এই দুই ভাবের খেলা। প্রাচীনা হলেও শক্তি নিত্যা – নবীনা। শ্রী রামকৃষ্ণদেবের কথায় ”চিকের আড়ালে দেবী সর্বদাই রহিয়াছেন।” গুপ্ত থেকে ব্যক্ত বলেই তিনি নবীনা আবার, যতবার ব্যক্ত ততবার নূতন।

অশুভ শক্তি বিনাশিনী সভ্যতার জন্মদাত্রী মায়ের উদ্দেশ্যে দীপ জালানো হয়।
দীপাবলি অর্থাৎ আলোর সারি। আলোর উৎসবে হ্রাস হয় সমস্ত অশুভ শক্তি। বর্তমানে সারা ভারতে বিভিন্ন জাতি কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপাবলীর উৎসব পালন করেন। আনন্দে মাতোয়ারা হয় সবাই।শক্তিরুপে দীপান্বিতা কালী মাতা পূজিতা হন সর্বত্র । অজ্ঞানতা হটে গিয়ে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা,অসমে কালীপূজা হয় । সমুদ্রমন্থনে দেবী লক্ষ্মীর জন্ম হয় বলে ওই দিন অনেকে লক্ষ্মীপুজোও করে থাকেন।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, বাংলাদেশে দুর্গাপুজোর আবির্ভাব যেখানে দ্বাদশ শতকে, কালীপুজোর আবির্ভাব তারও শ’চারেক বছর পরে। ভারতের অন্যত্র দেবী কালিকার প্রথম উল্লেখযোগ্য বিবরণ মেলে খিল – হরিবংশে। মদ মাংস প্রিয়া দেবী সেখানে শর্বর – বর্বর -পুলিনদের আরাধ্যা।

বাংলার বিভিন্ন উৎসব গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম উৎসব যেখানে,ভরা অমাবস্যায় মধ্যরাত্রে পূজা উদযাপিত হয়ে থাকে। ভূত-প্রেত নরক – এইসব কালীপূজার সঙ্গে কাল্পনিকভাবে জড়িত ।পূজার আগের দিন তাই ভূত চতুর্দশী হিসেবে পালিত হয়। পরলোকগত স্বজন ও বন্ধুরা যাতে নিরাপদে গন্তব্যে যেতে পারে, তাই নদীর জলে প্রদীপ ভাসানো রেওয়াজ । আশ্বিনের সংক্রান্তি থেকে শুরু করে সারা কার্তিক মাস আকাশপ্রদীপ এই কারণেই জ্বালানো হয়ে থাকে । বাজির বারুদ এর ব্যাপারটা অনেক পরে এসেছে । আওয়াজ করে আদিম কাল থেকেই হিংস্র জন্তু জানোয়ারদের তাড়িয়ে আসছে গুহা মানবরা । বিভিন্ন বাজির মাধ্যমে আলোর রোশনাই এ ভূত-প্রেতদের কাল্পনিক ধারনার অনুসূত্র হিসেবে তাই তাড়ানো হয়ে থাকে। বাজি পোড়ানো একটি উৎসবের অঙ্গ হিসেবে জড়িয়ে গেছে।

আলোর উৎসব বা বলা ভাল আগুন জ্বালানোর উৎসব এক প্রকার মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ভাব প্রকাশ। আদিকাল থেকেই আগুনকে আয়ত্তের মধ্যে এনে মানুষ নিজেকে বিজয়ী ভাবতে শুরু করে, যা প্রায় বিশ্বের সর্বত্র সমাদ্রিত। আমাদের দেওয়ালি, জাপানের ওবোন, চীনের ক্যুইং মিং, লেনটেন ফায়ার্স , সিস্টার ফায়ারস, হ্যালোউইন ফায়ার্স – সব আগুনে পরব-এর কমবেশি একই রকম বক্তব্য।

শ্যামা মা ওড়াচ্ছে ঘুড়ি
ভবো সংসার বাজার মাঝে।….
ঘুড়ি লক্ষ্যে দু-একটা কাটে
হেসে দাও মা হাত চাপড়ি।….
মায়ের দুই সাধক সন্তান- রামপ্রসাদ ও রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। আমরা সবাই মায়ের সন্তান ।আমাদের নিত্যদিনের জীবন সৃষ্টি করে থাকে ঈশ্বররুপী প্রতিমাকে। তাই ভাব সিদ্ধ হতে গেলে অন্তর থেকে দূর করতে হবে সমস্ত কালিমা। “স্ত্রিয়: সমস্তা: সকলা জগৎসু”– হে দেবী তুমিই যাবতীয় স্ত্রী মূর্তি রূপে আপনি প্রকাশিত হইয়া রহিয়াছ – চন্ডী পুরাণ । এইসব সকাল-বিকেল পড়লাম আর নারীর সাথে দুর্ব্যবহার করলাম তাহলে আর ঈশ্বরকে পাওয়া হবে না ।
”যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতা:।” -যে গৃহে নারীগণ পূজিতা হন সেই গৃহে দেবতা সকলও সানন্দে আগমন করেন। গৃহের যজ্ঞ তখনই সুসম্পাদিত হয় যখন দেবীরুপী নারীদের সম্মান দেওয়া হয়।
ঘরে ঘরে আমাদের মা স্ত্রী ভগিনী ও কন্যাকে সুন্দর ব্যবহার ও যোগ্য সম্মানে দীপান্বিতা শ্যামা পূজা সার্থক হয়ে উঠুক ।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version