জয়েন্টের পরের রাস্তা ঠিক কেমন? কেরিয়ারের পথকে সুগম করতে শিক্ষার্থীদের কী কী করণীয়। কাউন্সেলিং সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রইল বেশ কিছু তথ্য বিশদে জানালেন জে আই এস গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (অ্যাডমিশনস ও বিজনেস ডেভেলমেন্ট) বিদ্যুত মজুমদার
শুরু হয়ে গেল রাজ্য জয়েন্টের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির প্রক্রিয়া যা ই-কাউন্সেলিং হিসাবে পরিচিত তা শুরু হয়েছে ছাব্বিশে আগস্ট থেকে এবং এই প্রক্রিয়া শেষ হবে আগামী উনত্রিশে সেপ্টেম্বর।এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফার্মাসি কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, সব মিলিয়ে যার সংখ্যা একশো পাঁচটি বা তারও বেশি সেখানে জয়েন্টে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হতে পারবেন।সব মিলিয়ে আসন সংখ্যা চৌত্রিশ হাজারেরও বেশি।এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ারও ব্যবস্থা রয়েছে রাজ্যের নব্বইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।এই সংখ্যা সরকারী ও বেসরকারী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে।
রাজ্য জয়েন্টের ই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন আছে। এবারের ই-কাউন্সেলিং প্রক্রিয়াকে ভাগ করা হয়েছে মূলত তিনটি পর্বে।যার মধ্যে শেষ পর্বটি হল মপ-আপ পর্ব। ই-কাউন্সিলের প্রথমেই সেরে ফেলতে হবে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পর্ব।এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।কারণ এর মাধ্যমেই ছাত্র-ছাত্রীরা ই-কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন।যারা ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা তাদের জয়েন্ট প্রবেশিকা পরীক্ষার রোল নম্বর, পাসওয়ার্ড ও সিকিউরিটি পিন দিয়ে ই-কাউন্সেলিংয়ের প্রথম পর্বের চয়েস ফিলিং এর কাজ শুরু করতে পারবেন।নাহলে নিউ ক্যান্ডিডেট রেজিস্ট্রেশনের লিঙ্কের মাধ্যমে নতুন রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন। প্রথম পর্বের এই রেজিস্ট্রেশন এবং চয়েজ ফিলিং এর প্রক্রিয়া চলবে পয়লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।চয়েজ লকিং শুরু হবে একত্রিশে আগস্ট এবং শেষ হবে পয়লা সেপ্টেম্বর।এর পরেই ৭ই সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হবে প্রথম পর্বের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় ভিত্তিক আসন বন্টনের তালিকা। তবে রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রার্থীকে ৫০০ টাকা ফী অনলাইনে জমা দিতে হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের ই-কাউন্সেলিংয়ের সমস্ত প্রক্রিয়া জানা যাবে www wbjee.nic.in ওয়েবসাইট থেকে। এছাড়াও লগ ইন প্রক্রিয়া ও ই-কাউন্সিলংয়ের গোপনীয়তা বজায় রাখার দায়িত্ব একান্তভাবে প্রার্থীর। এজন্য লগ ইন পাসওয়ার্ড কাউকে না জানানোই বাঞ্ছনীয় এবং যতবার সম্ভব তা পরিবর্তন করে নেওয়াই ভালো। আবার নতুন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে জয়েন্ট এন্ট্রাস বোর্ডের প্রদত্ত শর্ত গুলির সঙ্গে সহমত হতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের সময় যাবতীয় তথ্য গুলো সঠিকভাবে জানানো উচিৎ এবং বিশেষ করে সঠিক মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল আইডি দেওয়া উচিৎ যাতে বোর্ডের পক্ষে প্রার্থীকে যোগাযোগের কাজটি সহজ হয়ে যায়।যারা টিএফ উব্লিউ কোটায় ভর্তি হতে চান বা যারা তফশিলী জাতি‚উপজাতি ক্যাটাগরিতে আবেদন জানাতে চান সেগুলিকেও উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও ভর্তির পরেও যদি ঐ ছাত্র বা ছাত্রী তার নাম তুলে নিতে চান তাদের জমা দেওয়া টাকা যাতে ফেরত দেওয়া যায় তাই প্রার্থীর ব্যাংক একাউন্ট সংক্রান্ত তথ্যও রেজিস্ট্রেশনের সময় জানাতে হবে।
এবারে আসা যাক চয়েজ ফিলিং বিষয়ে।এই পর্বে ছাত্র ছাত্রী ৫২৩টি চয়েজের মধ্যে কলেজ ও বিষয়কে পছন্দের ক্রমানুসারে সাজাতে পারবেন। ছাত্র ছাত্রীরা যতখুশী কলেজ ও তার অন্তর্গত বিষয়গুলোকে নিজের ইচ্ছেমত সাজাতে বা পরিবর্তন করতে পারবেন।চয়েজ লকিং এর আগে পর্যন্ত চয়েজ ফিলিংয়ের কাজ যতবার ইচ্ছা পরিবর্তন করা যাবে। তবে চয়েজ লকিং এর পর তা আর সম্ভব নয়। তবে এটিও খেয়াল রাখতে হবে প্রতি ১৪ মিনিট পর পর চয়েজ ফিলিং এর জন্য লগ ইন করতে হবে। চয়েজ এর আগে যতবার খুশি চয়েজ ফিলিং সেভ করতে হবে। চয়েজ ফিলিংয়ের ক্ষেত্রে পছন্দের কলেজ ও বিষয়কে ইন্টারচেঞ্জ বা মুভ আপ অথবা মুভ ডাউনের মাধ্যমে পছন্দের তালিকাকে ক্রমানুসারে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উপর নীচ বা অদল বদল করা যেতে পারে। চয়েজ লকিং পর্বের শেষে প্রার্থীর মোট চয়েজ এবং চয়েজ লকিং স্টেটাস দেখা মাবে। প্রার্থী চয়েজ লকিং স্টেটাসটি প্রিন্ট আউট নিতে পারেন আবার ডাউনলোডের মাধ্যমে প্রার্থী চয়েজ লকিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সেভ করে নিতে পারেন।
প্রথম পর্বের আসন বন্টন হবে জয়েন্টে এন্ট্রাসের মেধা তালিকার ভিত্তিতে। এরপরে প্রার্থী ঐ বিষয়ে প্রাপ্ত কলেজের জন্য ফি অ্যাক্সপেটেন্সের মাধ্যমে।এর জন্য প্রার্থীকে ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিয়ে কলেজের রিপোর্টিং কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে অথবা দ্বিতীয় পর্বে আপগ্রেডেশন চাইতে পারে।এই পর্ব চলবে ৭ই সেপ্টেম্বর থেকে ১২ই সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এর পর দ্বিতীয় পর্বের আসন বন্টনের তালিকা প্রকাশিত হবে ১৫ ই সেপ্টেম্বর।
এবারে আসা যাক আপগ্রেডেশন বিষয়ে।প্রথম পর্বে প্রার্থী যে কলেজ ও বিষয় পেয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে সে পরবর্তী পর্বে আপগ্রেডেশন চাইতে পারেন যদি ঐ কলেজ ও বিষয়টি দ্বিতীয় পর্বে খালি থাকে এবং তার ব্যাঙ্ক অনুসারে যদি তা প্রাপ্তির উপযোগী হয় তবে দ্বিতীয় পর্বে আসন বন্টনের ক্ষেত্রে তার নাম উন্নীত হবে।যদি তা সম্ভব না হয় তবে প্রথম পর্বের বন্টনের ভিত্তিতে কলেজ ও বিষয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় পর্বের ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে ১৫ ই সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।এই প্রক্রিয়া একেবারে প্রথম পর্বের মতোই।এই পর্বেও যেসব প্রার্থীরা ই-কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিতে চান প্রথম পর্বের মতোই তা করতে পারবেন। তবে নাম প্রত্যাহার করে নিলে তিনি আর ই-কাউন্সেলিংয়ে সুযোগ দিতে পারবেন না।
দ্বিতীয় পর্বের শেষে একুশে সেপ্টেম্বর থেকে তেইশে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে তৃতীয় পর্ব বা মপ-আপ পর্ব। এই পর্ব হল ই-কাউন্সেলিংয়ের শেষ পর্ব। এই পর্বে যারা দ্বিতীয় বা কোন পর্বেই আসন পাননি তারা সুযোগ পাবেন।মপ আপ পর্বে প্রার্থীকে আবার রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দেওয়া হয় এবং প্রার্থী চয়েজ ফিলিং এর মাধ্যমে খালি আসন গুলিতে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ বছরের মপ-আপ পর্বের ফল প্রকাশিত হবে ২৭ শে সেপ্টেম্বর এবং ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে ২৯ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।২৯ শে সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে এবারের ই-কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া।
লেখা শেষ করার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা না করলেই নয়। প্রথমত ইঞ্জিনিয়ারিং বা ফার্মেসি পড়ার আগে কোন কলেজে বা কোন বিষয়ে পড়বো তা অন্যের কথায় প্রভাবিত না হয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ভালো হয়।তবে মেকানিকাল ইলেকট্রিক্যাল বা ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের অংকে যথেষ্ট দক্ষতা থাকার প্রয়োজন আছে। ঠিক তেমনি অটোমোবাইল টেকনোলজি বা বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রচুর চাকরির সুযোগ। এই বিষয়ে পাশ করা ছাত্র ছাত্রীদের বহু অংশে প্লেসমেন্ট হয়েছে। এ বছর কম্পিউটার বিজ্ঞানেরও বহু শাখা খুলেছে যেমন এ আই মেশিন লার্নিং, কম্পিউটার সাইন্স টেকনোলজি, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড বিজনেস স্টাডিস ইত্যাদি। চার বছর বাদে এইসব বিষয়ে চাকরির সুযোগ যথেষ্ট বাড়বে। এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিষয়েও জানা না থাকলে বিশেষজ্ঞ বা গুগল সার্চের মাধ্যমে এগুলি সম্পর্কে জেনে নিন।