দক্ষিণ ভারত এবং শ্রীলঙ্কার বহু পরিচিত থাইপসাম (Thaipusam) উৎসবের একটি রূপ হলো পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ব্যান্ডেল এর তামিল সম্প্রদায়ের ভেল ভেল উৎসব। স্কন্দ পুরাণ অনুসারে দেবসেনাপতি কার্তিকেয় , যাঁর স্থানীয় নাম মুরুগান, তাঁকে মাতা পার্বতী ভেল অর্থাৎ ত্রিশূল প্রদান করেছিলেন সুরাপদমন নামক অসুরকে বধ করার জন্য।  এই উৎসব সেই পবিত্র ক্ষণ পালনেরই অঙ্গ।

 

স্থানীয় পুকুরে পবিত্র স্নানের মাধ্যমে উৎসব ও লোকাচারের সূচনা হয়। অনেক ভক্তই আগে থেকে উপবাস ও সংযম পালন করেন।
স্নানের পরে ভক্তদের শরীরে হলুদের প্রলেপ লাগিয়ে দেওয়া হয়। এর সঙ্গে অনেকেই নিমপাতার একটি আভরণ ও পরিধান করেন।

 

চারিদিকের ঢাকের আওয়াজের মাঝেই ভক্তদের কানে মন্ত্রের মতো ভেল ভেল উচ্চারণ করা চলতে থাকে। এই শব্দযুগল আসলে Vetri Vel, Veera Vel কথাটির অংশবিশেষ, যার অর্থ পবিত্র ভেল, সাহসী ভেল।
সামগ্রিক পরিবেশ ও মন্ত্রের প্রভাবে অনেক ভক্তের মধ্যেই দেবতার ভর অর্থাৎ প্রভাব হয় বলে বিশ্বাস ।এর ফলে তাঁরা আপাতদৃষ্টিতে অদ্ভুতভাবে নাচতে থাকেন।
নাচ সমাপ্ত হলে তাদের নিকটবর্তী ওলাইচন্ডী মাতার মন্দিরের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁরা নিজেদের মুখে ভেল অর্থাৎ ত্রিশূল ফোটান।
অনেকেই এর সঙ্গে আবার নিজের শরীরে বড়শি বেঁধান। এই বড়শির সাহায্যে তাঁরা রথ টেনে নিয়ে যাবেন।

 

 

 

এরপর শুরু হয় যাত্রা। কেউ মাথায় ঘট নিয়ে, কেউ মুখে ত্রিশূল ও হাতে ধুনুচি নিয়ে।
আবার কেউ পিঠের বড়শির সাথে দেবতার রথ যুক্ত করে রাস্তা দিয়ে শোভাযাত্রা করে যেতে শুরু করেন।
শোভাযাত্রা দেখার জন্য শহরের রাস্তার দুই ধারে অগুনতি লোকজন দাঁড়িয়ে থাকেন।
কেউ আবার পবিত্র ভক্তদের স্পর্শ পাবার জন্য কোলের শিশুকেও রাস্তায় শুইয়ে দেন। ভক্তরা অবশ্য অতি সন্তর্পণে শুধুমাত্র স্পর্শ দিয়েই পা সরিয়ে নেন।
যাত্রাপথের মাঝে একটি শিবমন্দিরে ভক্তরা ওই ত্রিশূল ও বড়শি নিয়েই আরতি ও নৃত্য পরিবেশন করেন।
এই ভাবে প্রায় চার কিলোমিটার পথ বেরিয়ে মাদ্রাজী মন্দিরে শোভাযাত্রার শেষ হয়।  তবে শোভাযাত্রার শেষেও আছে বৈচিত্র্য।
গরম আগুনের উপর দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে শোভাযাত্রার শেষ হয়। বিশ্বাস ও স্থানীয় লোকাচারের এ এক অভূতপূর্ব ও বিরল নিদর্শন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here